শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন

আপডেট
তোমরা আমার কলিজার টুকরো ছেলেকে এনে দাও

তোমরা আমার কলিজার টুকরো ছেলেকে এনে দাও

তোমরা আমার কলিজার টুকরো ছেলেকে এনে দাও

রেজাউল করিম রেজা,ময়মনসিংহ :
ছেলের ছবি হাতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক (ওসি) মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়ার শতবর্ষী মা পুরো বাড়িতে সুনসান নীরবতা। নির্বাক পরিবারের সদস্যরা। শতবর্ষী মা গুলজান বেগম খাটে শুয়ে ছেলের ফ্রেমবাঁধানো একটি ছবি নিয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। কিডনি, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় আক্রান্ত মায়ের আহাজারি কোনোভাবেই থামছে না। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই কারো। বার বার তিনি আহাজারি করে বলছেন, তোমরা আমার কলিজার টুকরো ছেলেকে এনে দাও।

আমার ছেলে নেই, এখন কে আমাকে ওষুধ কিনে দেবে এবং খাওয়াবে ? আমার ছেলেকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই। কবে বিচার পাবো? মরার আগে যেন তাদের বিচার দেখে মরতে পারি ।কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুর্বৃত্তের হামলায় গত ২১ জুলাই নিহত হন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক (ওসি) মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া। এ ঘটনায় তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কালান্দহ গ্রামে চলছে শোকের মাতম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের কালান্দর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া ও গুলজান বেগমের আট ছেলে-মেয়ের মধ্যে মাসুদ ষষ্ঠ। ১৯৯৬ সালে তিনি উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন। অনেকদিন ধরে তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় বসবাস করতেন। তার বড় মেয়ে উম্মে মাইশা স্নেহা ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত।

মেজো মেয়ে উম্মে মাহিরা নেহা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সবার ছোট আহনাফ মাহিন ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। নিহত মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়ার ছোট ভাই সোহেল ভূঁইয়া প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়দায়িত্ব ছিল ভাইয়ের হাতে। আমাদের খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন তিনবেলা খাবারের আগে মায়ের খবর নিতেন। মাস শেষ হওয়ার আগেই মায়ের ওষুধ কিনে পাঠিয়ে দিতেন। প্রতিমাসে মাকে একবার ডাক্তার দেখাতেন। নিহতের স্ত্রী মেরিনা আক্তার বীনা বলেন, গত রোববার দুপুরে তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রী হত্যার বিচারের পাশাপাশি সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন। কোনো সহযোগিতা না পেলে তিন সন্তানকে নিয়ে চলা খুব কষ্ট হয়ে যাবে। কালান্দর গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান মাস্টার প্রতিদিনের কাগজকে জানান, ওসি মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া ছিলেন ভাল মানুষ। সবার পাশে দাঁড়াতেন । তিনি ভাল একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন।আমি একদিন ঢাকায় গিয়ে তাকে ফোন করি তখন ওসি ভাই আমাকে তার গাড়ী দিয়ে নিয়ে যান । কয়েক জায়গায় ঘুরিয়ে দেখান। এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |